Song: Jailkhanar Chithi
Composer : Mishu
Lyricist : Tapan Mahmud
Jailkhanar Chithi Lyrics in Bengali
গান :
কত দু:খ কত কষ্ট মিলে আছে নিরবতা
স্বাধীনতা ..
অথবা সেই চোখে ছিলো মুক্তির গান
আজন্ম আশ্বাসের ধারা,
প্লাবিত ভালোবাসায় পাগলপারা
চরমপত্রের টান-টান উত্তেজনার বান।
চোখে চোখ রেখে যুদ্ধে যাবো
সেই বাঁধনের মতো খাঁমচে ধরবো,
অধিকার .. অধিকার ..
অধিকার .. অধিকার ..
একাত্ম হও, তোমাতেই ফিরবো
একাত্ম হও, তোমাতেই ফিরবো।
কবিতা :
প্রিয়তমা আমার,
তেমার, তেমার শেষ চিঠিতে
তুমি লিখেছ,
মাথা আমার ব্যথায় টন্ টন্ করছে
দিশেহারা আমার হৃদয়।
তুমি লিখেছ,
ওরা যদি তোমাকে ফাঁসী দেয়
যদি তোমাকে হারাই
আমি বাঁচব না।
তুমি বেঁচে থাকবে প্রিয়তমা বধু আমার
আমার স্মৃতি কালো ধোঁয়ার মত
হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে,
তুমি বেঁচে থাকবে,
আমার হৃদয়ের রক্তকেশী ভগিনী,
বিংশ শতাব্দীতে
মানুষের শোকের আয়ূ
বড় জোর এক বছর।
মৃত্য,
দড়ির এক প্রান্তে দোদুল্যমান শবদেহ
আমার কাম্য নয় সেই মৃত্যু।
কিন্তু প্রিয়তমা আমার,
তুমি জেনো
জল্লাদের লোমশ হাত
যদি আমার গলায় ফাঁসির দড়ি পরায়,
নাজিমের নীল চোখে
ওরা বৃথাই খুঁজে ফিরবে ভয়।
অন্তিম,
অন্তিম ঊষার অস্ফুট আলোয়
আমি দেখব আমার বন্ধুদের,
তোমাকে দেখব
আমার সঙ্গে কবরে যাবে
শুধু মাত্র এক অসমাপ্ত গানের বেদনা।
বধু আমার, বধু আমার
তুমি আমার কোমলপ্রাণ মৌমাছি
চোখ তোমার মধুর চেয়েও মিষ্টি,
কেন যে তোমাকে লিখতে গেলাম
ওরা আমাকে ফাঁসি দিতে চায়,
বিচার সবে মাত্র শুরু হয়েছে
আর মানুষের মুন্ডুটা তো বোঁটার ফুল নয়
যে ইচ্ছে করলেই ছিঁড়ে নেবে।
ভুলে যেও না
স্বামী যার জেলখানায়,
তার মনে যেন
তার মনে যেন সব সময় ফুর্তি থাকে।
বাতাস আসে, বাতাস যায়
চেরির একই ডাল একই ঝড়ে
দুবার দোলে না।
গাছে গাছে পাখির কাকলি
পাখাগুলো উড়তে চায়,
জানলা বন্ধ
টান মেরে খুলতে হবে।
আমি, আমি তোমাকে চাই
তোমার মতই রমনীয় হোক জীবন,
আমার বন্ধু, আমার প্রিয়তমার মত।
নতজানু হয়ে আমি চেয়ে আছি
মাটির দিকে,
উজ্জল নীল ফুলের মঞ্জরিত
শাখার দিকে আমি তাকিয়ে,
তুমি যেন মৃন্ময়ী বসন্ত, আমার প্রিয়তমা
আমি তোমর দিকে তাকিয়ে।
মাটিতে পিঠ রেখে দেখি আকাশকে
তুমি মধুমাস, তুমি আকাশ
আমি তোমাকে দেখছি প্রিয়তমা।
আর রাত্রির অন্ধকারে,
গ্রামদেশে শুকনো পাতায়
আমি জ্বালিয়েছিলাম আগুন,
আমি স্পর্শ করছি সেই আগুন
নক্ষত্রের নিচে অগ্নিকুন্ডের মত জ্বালা তুমি
আমার প্রিয়তমা, আমি তোমাকে স্পর্শ করছি।
আমি আছি মানুষের মাঝখানে,
ভালবাসি মানুষকে,
ভালবাসি আন্দোলন,
ভালবাসি চিন্তা করতে,
আমার সংগ্রামকে আমি ভালবাসি
আমার সংগ্রামের অন্তঃস্থলে
মানুষের আসনে তুমি আসীন
প্রিয়তমা বধু আমার,
আমি তোমাকে ভালবাসি।
গান :
স্বপ্নাতুর চোখে আবেগ আর আন্দোলন
মিলে-মিশে একাকার,
সমুদ্র গভীর জনতার দাবী, কন্ঠের সন্তরণ
চিত্কারে মেশে হাহাকার।
কবিতা :
রাত এখন ন’টা
ঘন্টা বেজে গেছে গুমটিতে,
সেলের দরোজা তালা বন্ধ হবে এক্ষুনি।
বেঁচে থাকায় অনেক আশা, প্রিয়তমা
তোমাকে ভালবাসার মতই
একাগ্র বেঁচে থাকা।
কাল রাতে তোমাকে আমি স্বপ্ন দেখলাম
মাথা উঁচু করে,
ধুসর চোখে তুলে
তুমি চেয়ে আছো আমার দিকে।
কৃষ্ণপক্ষ রাত্রে কোথাও আনন্দ সংবাদের মত
ঘড়ির টিক্ টিক্ টিক্ টিক্ আওয়াজ,
বাতাসে গুন্ গুন্ করছে মহাকাল
আমার ক্যানারীর লাল একটি খাঁচায়,
গানের একটি কলি
লাঙ্গল-চষা ভূঁইতে
মাটির বুক চিরে উদগত অঙ্কুরের দুরন্ত কলরব
আর এক মহিমান্বিত জনতার বজ্রকণ্ঠে
উচ্চারিত ন্যায্য অধিকার,
তোমার আদ্র ওষ্ঠাধর কম্পমান
কিন্তু, কিন্তু তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম না।
গান :
আগামীর আমরা, বর্তমানে আছি
সূর্যের একটা দিন আলোর হাতছানি,
সুন্দরতম সূচনায় শেকলের মতো হাতে হাত
একাগ্র চাওয়ায়,
ভোর হবে কালো রাত,
ভোর হবে কালো রাত।
কবিতা :
যে সমুদ্র সব থেকে সুন্দর
তা আজও আমরা দেখিনি,
সব থেকে সুন্দর শিশু
আজও বেড়ে ওঠে নি,
আমাদের সব থেকে সুন্দর দিনগুলো
আজও আমরা পাইনি,
মধুরতম যে কথা আমি তোমাকে বলতে চাই
সে কথা, সে কথা আজও আমি বলি নি।
কিন্তু আমি জেলে যাবার পর
আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে দিন,
আর অন্ধকারের কিনারা থেকে
ফুটপাথে ভারী হাতে তারা
অর্ধেক উঠে দাঁড়িয়েছে,
আর আমি জেলে যাবার পর
সূর্যকে দশ-বার প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী
আর আমি বারংবার সেই একই কথা বলছি,
জেলখানায় কাটানো দশটা বছরে
যা লিখেছি সব সব তাদেরই জন্যে
যারা মাটির পিঁপড়ের মত
সমুদ্রের মাছের মত
আকাশের পাখির মত অগনিত,
যারা ভীরু, যারা বীর
যারা নিরক্ষর, যারা শিক্ষিত
যারা শিশুর মত সরল
যারা ধবংস করে, যারা সৃষ্টি করে
কেবল তাদেরই জীবনবৃত্তান্ত
মুখর আমার এ গানে।
আর ধরো,
আমার জেলের দশটা বছর
শুধুমাত্র, শুধুমাত্র, কথার কথা
কথার কথা, হা হা হা.. কথার কথা।